০৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

তনু হত্যার দশ বছর : আইও বদল ছাড়া কিছুই হয়নি!

নিউজ আপডেট
নিউজ আপডেট

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২০ মার্চ। ২০১৬ সালের এই দিনে খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড ১০-এ পা দিলেও এখনো বিচারের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে তার পরিবার। ৯ বছর আগে এমন এক সন্ধ্যায় বাসা থেকে প্রাইভেট পড়াতে বের হন তনু। কিন্তু ফেরেন লাশ হয়ে।

তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তখন দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিচারের দাবিতে শোরগোল ওঠে। দেশ-বিদেশে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মামলা-মোকাদ্দমা চললেও এখনো এ বিচারপ্রক্রিয়া আলোর পথ দেখেনি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘৯ বছর ধরে অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছি। জীবদ্দশায় আমার মেয়ের বিচার দেখার ভাগ্য আমার হবে না। একটি মাত্র মেয়ে ছিল আমার।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলছিলাম আমার মেয়েকে। তিন সন্তানের মধ্যে তনু ছিল একমাত্র মেয়ে। অভাবের সংসার, কিন্তু তনুকে অভাব বুঝতে দিইনি। সুস্থ অবস্থায় আমার মেয়ে বের হয়ে যায়, ফিরল নিথর হয়ে। এর থেকে কষ্ট-যন্ত্রণা একটা মায়ের আর কী হতে পারে?’

মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, মামলাটা কী অবস্থায় আছে জানি না। কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। ৯ বছর হয়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) কখন বদলে যায়, কখন কী করে—তা আমরা কিছুই জানি না। আগে ছিলেন মুজিবুর, এখন নাকি নতুন আইও তরিকুল। তাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম, কিছু বলেননি মামলার ব্যাপারে।’

তনু হত্যার সন্দেহভাজদের বিষয়ে আনোয়ারা বলেন, ‘আমরা সবাইকে দোষ দিচ্ছি না। যে দুইজন প্রধান সন্দেহভাজন, তাদের নিরপেক্ষভাবে জিজ্ঞাসা করলে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। তখন সঙ্গে সঙ্গে বিচার হবে। ৯ বছর যারা মামলার আইও ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। ওদেরও বিচার করতে হবে। যতগুলো আইও ছিল, সবাই অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিদের লোক। কেউ আমাদের সহায়তা করছে না। আমাদের যা বলার, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলব। আমরা পূর্ণ আশাবাদী, তাকে সব বলার পর মেয়ের বিচার পাব।’

তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে তার (অভিযুক্ত ব্যক্তির) বাসায় পড়াতে গিয়েছিল। এরপর মেয়েটা আর ফেরত আসেনি। আমি যখন মেয়ের খোঁজে তার বাসায় যাই, তখন তিনি আমাকে কিছু বলেননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তিনি বলেননি, আমার মেয়ের সঙ্গে কি হয়েছে, কোথায় গিয়েছিল। আমি বারবার বলেছি, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি এখনো। সে তো একটা মার্ডার মামলার আসামি। সঙ্গে তার স্ত্রীও যুক্ত। আমরা গণহারে দোষারোপ করছি না। ওই দু’জনকে ধরলেই সবকিছু জানা যাবে।’

মামলায় কারো নাম থাকার বিষয়ে ইয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসের ভেতরে থাকি। মামলা যদি আমি করতাম, তাহলে নাম উল্লেখ করে দিতাম। কিন্তু মামলা করছে আমার অফিস। কিছুদিন পরপর আইও পাল্টায়। অথচ এটা পাল্টানোর কথা ছিল আমার। কিন্তু পাল্টায় তারা।’

সব কথা প্রকাশ করায় জীবনের হুমকি রয়েছে জানিয়ে ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাই, যা বলার সেখানে বলব। তনুর মা হত্যাকারীদের ফাঁসি চায়—এটা নিউজের মধ্যে সবাইকে বলবেন। আমাদের যেন ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। আমরা বড় অসহায় অবস্থায় আছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু নিয়মিত সেনানিবাসের একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতেন। সেই বাসার আশপাশের জঙ্গলে তার লাশ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করে পুলিশ। লাশের দুই দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। সে সময় তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ১২:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
৭১

তনু হত্যার দশ বছর : আইও বদল ছাড়া কিছুই হয়নি!

আপডেট: ১২:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২০ মার্চ। ২০১৬ সালের এই দিনে খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড ১০-এ পা দিলেও এখনো বিচারের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে তার পরিবার। ৯ বছর আগে এমন এক সন্ধ্যায় বাসা থেকে প্রাইভেট পড়াতে বের হন তনু। কিন্তু ফেরেন লাশ হয়ে।

তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তখন দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিচারের দাবিতে শোরগোল ওঠে। দেশ-বিদেশে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মামলা-মোকাদ্দমা চললেও এখনো এ বিচারপ্রক্রিয়া আলোর পথ দেখেনি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘৯ বছর ধরে অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছি। জীবদ্দশায় আমার মেয়ের বিচার দেখার ভাগ্য আমার হবে না। একটি মাত্র মেয়ে ছিল আমার।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলছিলাম আমার মেয়েকে। তিন সন্তানের মধ্যে তনু ছিল একমাত্র মেয়ে। অভাবের সংসার, কিন্তু তনুকে অভাব বুঝতে দিইনি। সুস্থ অবস্থায় আমার মেয়ে বের হয়ে যায়, ফিরল নিথর হয়ে। এর থেকে কষ্ট-যন্ত্রণা একটা মায়ের আর কী হতে পারে?’

মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, মামলাটা কী অবস্থায় আছে জানি না। কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। ৯ বছর হয়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) কখন বদলে যায়, কখন কী করে—তা আমরা কিছুই জানি না। আগে ছিলেন মুজিবুর, এখন নাকি নতুন আইও তরিকুল। তাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম, কিছু বলেননি মামলার ব্যাপারে।’

তনু হত্যার সন্দেহভাজদের বিষয়ে আনোয়ারা বলেন, ‘আমরা সবাইকে দোষ দিচ্ছি না। যে দুইজন প্রধান সন্দেহভাজন, তাদের নিরপেক্ষভাবে জিজ্ঞাসা করলে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। তখন সঙ্গে সঙ্গে বিচার হবে। ৯ বছর যারা মামলার আইও ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। ওদেরও বিচার করতে হবে। যতগুলো আইও ছিল, সবাই অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিদের লোক। কেউ আমাদের সহায়তা করছে না। আমাদের যা বলার, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলব। আমরা পূর্ণ আশাবাদী, তাকে সব বলার পর মেয়ের বিচার পাব।’

তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে তার (অভিযুক্ত ব্যক্তির) বাসায় পড়াতে গিয়েছিল। এরপর মেয়েটা আর ফেরত আসেনি। আমি যখন মেয়ের খোঁজে তার বাসায় যাই, তখন তিনি আমাকে কিছু বলেননি। এমনকি আজ পর্যন্ত তিনি বলেননি, আমার মেয়ের সঙ্গে কি হয়েছে, কোথায় গিয়েছিল। আমি বারবার বলেছি, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি এখনো। সে তো একটা মার্ডার মামলার আসামি। সঙ্গে তার স্ত্রীও যুক্ত। আমরা গণহারে দোষারোপ করছি না। ওই দু’জনকে ধরলেই সবকিছু জানা যাবে।’

মামলায় কারো নাম থাকার বিষয়ে ইয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসের ভেতরে থাকি। মামলা যদি আমি করতাম, তাহলে নাম উল্লেখ করে দিতাম। কিন্তু মামলা করছে আমার অফিস। কিছুদিন পরপর আইও পাল্টায়। অথচ এটা পাল্টানোর কথা ছিল আমার। কিন্তু পাল্টায় তারা।’

সব কথা প্রকাশ করায় জীবনের হুমকি রয়েছে জানিয়ে ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাই, যা বলার সেখানে বলব। তনুর মা হত্যাকারীদের ফাঁসি চায়—এটা নিউজের মধ্যে সবাইকে বলবেন। আমাদের যেন ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। আমরা বড় অসহায় অবস্থায় আছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু নিয়মিত সেনানিবাসের একটি বাসায় প্রাইভেট পড়াতেন। সেই বাসার আশপাশের জঙ্গলে তার লাশ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করে পুলিশ। লাশের দুই দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। সে সময় তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যায়।